রংপুরের ঐতিহ্যবাহী লালদিঘি নয় গম্বুজ মসজিদ
লালদিঘি নয় গম্বুজ মসজিদ যা সাধারন মানুষের কাছে লালদিঘি মসজিদ নামেই পরিচিত। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা থেকে ১১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গোপিনাথপুর ইউনিয়নের লালদিঘিতে যার অবস্থান।
বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে যতগুলো মসজিদ আছে তার মধ্যে এই মসজিদটি অন্যতম।
ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে সর্বপ্রথম মসজিদটি আবিষ্কৃত হয়। মসজিদটি আবিষ্কারের সময় সেখানে এর নির্মাণকাল সংক্রান্ত কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি। সেকারণে এর নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য নেই।
তবে লোকমুখে শোনা যায়, জমিদার দিলওয়ার খান ও তার স্ত্রী দিদারা খান ইসলাম প্রচারে বদরগঞ্জে এসে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদের ভেতরে তাদের মাজারও রয়েছে। আবার মোঘল বংশের শেষ যুগের স্থাপত্যশৈলীর সাথে মিল থাকায় অনেকে মনে করেন মসজিদটি ১২১২ সালে নির্মিত হয়।
মসজিদটি নিমার্ণের সময় এই এলাকায় দারুণ পানি সংকট ছিল। স্থানীয় পানি সংকটের অবসানসহ মসজিদের নামাজিদের ওযু, গোসলের নিমিত্তে ও মসজিদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে একটি দিঘি খনন করা হয়। দিঘিতে মাছ চাষের ব্যবস্থাও ছিল। দিঘি খননের সময় প্রচুর লালমাটি অপসারণ করে দিঘির পাড়ে রাখা হয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবে এই মসজিদের পরিচিতি দাঁড়ায় লালদিঘি মসজিদ হিসেবে।
মসজিদটির দেয়ালে খচিত ছোট ছোট কারুকার্য চোখে পড়ার মতো। ফুল, তারাসহ পাহাড়ি নকশা আর ছোট ছোট বহু খোপ রয়েছে মসজিদের দেয়াল জুড়ে। মসজিদটি পুরোটাই একটি বেদীর উপর বসানো। বেদী বা মঞ্চটির উচ্চতা ১ মিটার। এক মিটার বেদীর অর্ধেকটা জুড়ে রয়েছে মসজিদ ও বাকী অর্ধাংশ আযান দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হত বলে ধারণা করা হয়ে থাকে।
মসজিদটির সামনে রয়েছে বড় একটি প্রবেশপথ। মসজিদের অংশে থেকে বেদীর অপর অংশে পৌঁছানোর জন্য রয়েছে একটি সিঁড়ি। এটি তৈরির সময় ইট ও চুনসুড়কি ব্যবহার করা হয়েছে। কাছেই রয়েছে ছোট একটি ঘাট বাঁধানো পুকুর।
মসজিদটিতে মোট নয়টি গম্বুজ রয়েছে যার প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য ৯.৪৫ মিটার এবং শীর্ষদেশে শোভা পাচ্ছে প্রস্ফুটিত পদ্ম ফুল সদৃশ শিরোচুড়া বা ফিনিয়াল এবং নিম্নাংশে ড্রামের মারলন অলংকরণ ছিল, যা এখন কিছুটা অস্পষ্ট।
মসজিদটির উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে মোট তিনটি করে ৯টি প্রবেশ পথ রয়েছে। প্রত্যেক দেয়ালের মাঝের প্রবেশপথটি অপর দুটি থেকে কিছুটা বড় আকৃতির। মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি মেহরাব, যারমধ্যে কেন্দ্রীয় মেহরাবটি অপর দুটির চেয়ে বড় আকৃতির।
পুকুর ছাড়াও মসজিদের পাশে রয়েছে লালদিঘি জান্নাতবাদ হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা, মাদরাসা মাঠ, ইসলামী পাঠাগার এবং কবরস্থান।