প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সাক্ষী শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ

0

অপরূপ সৌন্দর্য আর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সাক্ষী হয়ে শতবর্ষ পেরিয়ে আজও বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। বহু বছর আগে রুপসী বাংলার  কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া পদ্মা বুকে তৈরি হয়েছিল এই ব্রিজটি। পদ্মার জলরাশি আর খরস্রোতা উত্তাল ঢেউয়ে ছিল ভরা যৌবন। পদ্মার যৌবন হয়তো শেষ হতে চলেছে কিন্তু চিরযৌবনা সেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পদ্মার বুকে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলার অমর কীর্তি হয়ে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম সেতুবন্ধন তৈরি করেছে ঐতিহাসিক এই ব্রিজটি।

বাংলাদেশের পাবনা জেলা আর কুষ্টিয়া জেলাকে সংযুক্তকারী রেলসেতু হলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ যা বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। এই রেলসেতুটি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশি হতে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে। ব্রিজটি স্থাপনেও রয়েছে বিশাল এক ইতিহাস।

১৮৮৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কলকাতার সঙ্গে আসাম,ত্রিপুরাসহ উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজন অনুভব করে একটি ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব করেছিল। প্রস্তাবটি তখন কার্যকরী না হলেও কয়েক দশক পর ১৯০৯ সাল থেকে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।১৯০৯ সালে কাজ শুরু হওয়া ব্রিজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছিল ১৯১৫ সালে।

ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছিল ৩ কোটি ৫১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৪ ভারতীয় রুপি। ২৪ হাজার ৪০০ শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে ব্রিজটি নির্মিত হয়। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নামে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়। 

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭৯৮ দশমিক ৩২ মিটার। ব্রিজের ওপর রয়েছে দু‘টি ব্রডগেজ রেললাইন।ব্রিজটির নকশা করেছিলেন আলেকজান্ডার মেয়াডোস রেন্ডেল।ব্রিজে মোট স্প্যান সংখ্যা ১৫টি এবং প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার।ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজটি চালু করা হয়েছিল ১৯১৫ সালের ৪ঠা মার্চ।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্যাংক, যুদ্ধসরঞ্জামসহ সৈন্য পারাপার করত। পাক বাহিনীর চলার পথে বাধা সৃষ্টির লক্ষ্যে মিত্র বাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে ব্রিজের ওপর বোমা ফেলা হয়েছিল।

এতে করে ব্রিজের ১২ নম্বর স্প্যানটি ভেঙে যায় এবং ৯ ও ১৫ নম্বর স্প্যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যা পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্যে মেরামত করা হয়। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ব্রিজটি দিয়ে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২০১৫ সালে শতবর্ষ পূর্ণ করে ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ।

শৈল্পিক কারুকার্যে খচিত বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক লাল রঙের এই ব্রিজটি ১০০ বছর পেরিয়ে এখনো পর্যন্ত দর্শনার্থীদের মন আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করে চলেছে। এছাড়া এই ব্রিজটির ঠিক পাশ দিয়েই ২০০৪ সালে তৈরি করা হয়েছে একটি সড়কসেতু যা কুষ্টিয়া জেলার বিখ্যাত সাধক ফকির লালন শাহের নামানুসারে লালন শাহ সেতু নামে পরিচিত, যা পদ্মার বুকের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সঙ্গে এক অপরূপ সৌন্দর্যে মিলেমিশে রয়েছে। উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্বচক্ষে দেখার কৌতূহল আজও  মানুষের মনে রয়ে গেছে।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.