অর্থ সংকটে কেনা হচ্ছে না ইভিএম

0

নানা আলোচনা-সমালোচনার মুখে নেওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্পে অবশেষে সাড়া দেয়নি সরকার। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় প্রকল্পটি আপাতত প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে না।

ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৫০ আসনে ভোট করতে নেওয়া ইভিএম প্রকল্পটি স্থগিত ঘোষণা করেছে ইসি। তবে বর্তমান সক্ষমতায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে অন্তত ৬০ থেকে ৭০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে। গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় চিঠির মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশন ইভিএম প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ না করার সিদ্ধান্তের কথা ইসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে পাঠানো ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় ইভিএম ব্যবহার বৃদ্ধি ও টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাবটি বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনান্তে এবং বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সরকারের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় আপাতত প্রক্রিয়াকরণ না করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এমতাবস্থায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের ডিপিপি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ফেরত পাঠানো হলো। পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে বিষয়টি অবহিত করা হলো।’ 

আগামী নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে চরম সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল সরকার। চলমান বৈশ্বিক টালমাটাল অবস্থা এবং দেশের আর্থিক সংকটের মধ্যে মেগা এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন সরকারের নীতি নির্ধারকরা। করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সরকার যখন সব খাতে ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ করছে তখন বড় এ প্রকল্পটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।

চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ইভিএম কেনা ও এর পেছনে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন ছিল অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মধ্যে। এসব প্রশ্নের মধ্যেই ইভিএম কেনার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ছাড়াই। এ ছাড়া সরকারবিরোধী বিএনপি জোট সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও গত জুলাইয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বলেছিলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না। জাতীয় নির্বাচনে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন থেকে আরও দূরে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরাও। ফলে নির্বাচন কমিশনের বারবার টাইমলাইন এবং অব্যাহত চাপের মধ্যেও প্রকল্পটির ব্যাপারে সাড়া দেয়নি সরকার। এ ক্ষেত্রে চলমান প্রকল্পের দেড় লাখ মেশিন থেকেই ব্যবহারযোগ্যগুলো দিয়ে কতগুলো আসনে ভোট নিতে পারবে তা নির্ধারণ করবে ইসি।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.