সরকারের উচিত সংলাপের ব্যবস্থা করা: জাপা চেয়ারম্যান

0


সিটিটিভি (নিশাত শাহরিয়ার): জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মনোভাব কিছুটা নরম করতে হবে। নির্বাচনের জন্য সরকারের সংলাপের ব্যবস্থা করা উচিত। এজন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচনে সবার অংশ গ্রহণ নিশ্চিত না হলে বোঝা যায় না নির্বাচন সঠিক নাকি বেঠিক হলো।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবী জানিয়ে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারকে কিছু ছাড় দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন জাপা চেয়ারম্যান।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের একটি ফর্মূলা আছে, সবার পরামর্শ চাইলে আমরাও পরামর্শ দেবো। প্রতিটি নির্বাচন যেনো সুষ্ঠু হয়, দিনের ভোট যেনো রাতে না হয় এবং জোর করে যেনো ফলাফল ঘোষণা করা না হয় সেজন্য নেয়া সকল সিদ্ধান্তের সাথে দলের সঠিক অবস্থান জানিয়ে দেন তিনি।

এই মুহুর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই কঠিন, কেউ জানেনা কি হতে যাচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, কিছু বিদেশী শক্তি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে আবার কিছু বিদেশী শক্তি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আমরা ক্ষমতার জন্য লড়াই করবো না, আমরা জনগণের স্বার্থের জন্যই লড়াই করবো বলে জানান জিএম কাদের।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করবে কে এলো আর কে এলো না সেটা কোন ব্যাপার না।

এটা কি সঠিক সিদ্ধান্ত জনগনের কাছে এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি ? যদি বিএনপি পরাজিত হয় তাহলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে আবার আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে আওয়ামী লীগও অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে একটি যু্দ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আমরা কারো কাছে যাবো না, আমরা তিনশো আসনেই নির্বাচন করবো। কারো ক্ষমতার সিড়ি বা বি-টিম হবে না জাতীয় পার্টি।

জিএম কাদের আরোও বলেন, ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার বাজেটে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে যমুনা সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য যমুনা সেতু নির্মানের ব্যবস্থা করেছিলেন পল্লীবন্ধু। যমুনা সেতুর জন্য জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় এবং বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণ করেছিলেন এরশাদ । যমুনা সেতু নির্মানের বিষয়ে এরশাদ সাহেবের কথা স্বীকার করতে চায় না কোন সরকার। যমুনা সেতু নির্ধারিত ব্যায়ে এবং নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে। যমুনা সেতু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবদান। এরশাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী যমুনা সেতুর রেল লাইন বগুড়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে হবে বলে দাবি জানান বিরোধী দলীয় সংসদ উপনেতা।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ১৯৯৬ সালে শেয়ার বাজার ধসে লাখ লাখ মানুষ পথে বসে গেলো, অনেকে আত্মহত্যা করলো। আওয়ামী লীগ সরকার তখন তদন্ত করেছিলো। তখন আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালীর নাম উঠেছিলো, কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। শেয়ার কেলেংকারিতে কারো শাস্তি হয়নি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হলো এক মাস সেই তথ্য গোপন রাখা হয়েছিলো। ফিলিপাইনের ব্যাংকে এই টাকা জমা হওয়ার পর সেই দেশের গণমাধ্যম রিপোর্ট করায় আমরা জানতে পেরেছি। তখনো তদন্ত করা হয়েছিলো, সেই তদন্ত রিপোর্ট আমরা এখনো জানিনা বলে উল্লেখ করেন তিনি। চারশো মিলিয়ন ডলারে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই নির্মাণ করা হয়েছে। ১৫ বছর এটির লাইফ টাইম কিন্তু কোন আয় না হওয়ায় দেশের টেলিভিশন কোম্পানীগুলোকে অতিরিক্ত ফিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই ব্যবহার করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

এমন একটি লস প্রকল্পের পরেও সরকার নাকি আরো একটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই নির্মাণ করতে রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেছে বলে জানান জাপা চেয়ারম্যান। রুপপুরের পরে নাকি আরো একটি পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র করা হবে। ৫/৬ বিলিয়ন ডলারের স্থলে ১৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে একেকটি পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে। মনে হচ্ছে দুর্নীতির জন্যই বড় বড় প্রকল্প করা হচ্ছে।

দ্রব্যমূল্য উর্ধগতির কারনে দেশের মানুষ মারাত্মক কষ্টে আছে উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, আমাদের আয়ের চেয়ে ব্যায় বেশি তাই রির্জাভ কমে গেছে। প্রবাসীরা হুন্ডিতে দেশে টাকা পাঠায় আবার রফতানীও কমে গেছে। লুটপাট আর অদক্ষতার কারনে দ্রব্যমূল্য বেড়েই চলছে। আয় না বাড়লেও ব্যায় কিন্তু বেড়েই চলছে।

গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি জন্মষ্টমীতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছেন। তাদের সাবর্কি নিরাপত্তায় নিশ্চিত করেছিলেন তিনি। সংখ্যালঘুদের জন্য কল্যাণ ট্রাষ্ট করেছেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। জাতীয় পার্টির দেশ পরিচালনার সময় সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে নিরাপদে ছিলেন।

আবুল বারাকাতের একটি গবেষনার উদ্ধৃতি দিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হিন্দুদের জমি ও সম্পদ দখল করেছে। জাতীয় পার্টি কারো সম্পদ দখল করেনি। কিন্তু সংখ্যালঘুদের কিছু নেতা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নামে দুর্নাম ছড়াচ্ছে।

আইন ও শালিস কেন্দ্রের জরিপের ফল অনুযায়ী গেলো ১৫ বছরে হিন্দুদের জমি দখল, অত্যাচার, নির্যাতন, মন্দির ভাংচুরের ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত। ক্ষমতাসীনরা সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করে কিন্তু তাদের নেতারা ক্ষমতাসীনদের সাথে ভাগ বাটোয়ারা করে সকল দোষ জাতীয় পার্টির ওপর দেয়। জাতীয় পার্টি মনে করে সভ্য সমাজ গড়তে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত জরুরি। শারদীয় দূর্গা উৎসব উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

জাতীয় পার্টি গাইবান্ধা জেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ২০২৩ উপলক্ষে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা আহ্বায়ক আবদুর রশিদ সরকারের সভাপতিত্বে এবং জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব সরোয়ার হোসেন শাহীনের পরিচালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ মোস্তফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পটোয়ারী এমপি, মেজর অবঃ রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি, আতাউর রহমান সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মমতাজ উদ্দিন, ভাইস-চেয়ারম্যান এডভোকেট গোলাম শহীদ রঞ্জু, এস এম ইয়াসির, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক,
উপজেলা জাতীয় পার্টি নেতা মইনুর রাব্বি চৌধুরী রুমন, কাজী মশিউর রহমান, রকিবুল হাসান সরকার।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, মাসরুর মওলা, মোঃ খলিলুর রহমান খলিল আরো উপস্থিত ছিলেন দফতর সম্পাদক -২ এম এ রাজ্জাক খান, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইন্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মিলন চৌধুরী, যুগ্ম দফতর সম্পাদক সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় নেতা জি এম বাবু, মোঃ রেজাউল করিম, আঃ রাজ্জাক মন্ডল, সোলায়মান সামি, মেজর অবঃ সরদার আনিসুর রহমান, ইন্জিনিয়ার মোস্তফা সরয়ার, মহসিন, সোহেল রহমান, খোরশেদ আলম।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.