খদ্দেরের পুরুষাঙ্গ কেটে নেয়ার হুমকি দিয়ে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয় হোটেল হোয়াইট ব্রীজ

0

রাজধানীর মিরপুর-০১ এর দারুসসালাম রোডের মদিনা টাওয়ারে অবস্থিত হোয়াইট ব্রীজ হোটেলের ভিজিটিং কার্ডে বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম দিয়ে শুরু হলেও বাকী সব কিছুই যেন আইয়ামে জাহেলিয়া যুগকেও হার মানায়। এমন কোন অপকর্ম নেই যেটা এই হোটেলে হয় না। নারী, বিদেশী মদ আর জুয়ার আসর বসিয়ে অপরাধের ষোলকলা পূর্ণ করেছে হোটেল হোয়াইট ব্রীজ। টাকার বিনিময়ে অপরাধ আর অপকর্মসহ সবকিছুই এখানে বৈধ। বিশেষ করে সন্ধার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে উঠতি বয়েসী নারীদের দিয়ে রমরমা দেহ ব্যবসা। সাথে বিদেশী মদের সমাহার তো আছেই। আর রাত দশটার পর থেকে গভীর রাত অব্দি চলে জুয়ার আসর। এভাবে দীর্ঘদিন যাবত অনৈতিক উপায়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

মাঝ বয়েসী হোটেল ম্যানেজার সোহাগসহ আরও একজনের তত্ত্বাবধানে চলে অপকর্মের যাবতীয় হিসেব নিকেশ। জানা যায়, জামান নামে এক ব্যবসায়ী এই হোটেলটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। কথিত এই জামানের সাথে সর্ম্পক রয়েছে সমাজের নামীদামী ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের। যাদের অনেকেই হোটেল হোয়াইট ব্রীজের নিয়মিত মেহমান।

রাজধানী এবং রাজধানীর বাইরে থেকে আসা কেউ এই হোটেলে রাত্রী যাপন করতে চাইলে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন তারা। উঠতি বয়েসী মেয়েদের সাথে রাত্রি যাপনের জন্য নানাভাবে উত্সাহিত করা হয় আগত বোর্ডারদের। কেউ যদি রাজী হয়ে যান তাদের প্রস্তাবে তাহলে সুকৌশলে জিম্মি করে বাড়তি অনেক টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় বোর্ডারদের কাছ থেকে।

রিসিপশনের চাকচিক্যময় সৌন্দর্য দেখে বোঝার উপায় নেই ভেতরে কতটা খারাপ নিয়তি অপেক্ষা করছে বোর্ডারদের জন্য। বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা লোকজন দেখলেই হোটেল কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে এদের সাথে কিরূপ আচরন করতে হবে। রুম ভাড়া ঠিক করে ভেতরে প্রবেশের পরপরই যেন দেখা মিলে অপরিচিত এক নতুন দুনিয়ার। ভাড়া করা রুমে ঢোকার সাথে সাথেই প্রশিক্ষিত অল্প বয়েসী পতিতাদের দিয়ে চলে হুমকি, ধামকিসহ জিম্মি করার পুরো প্রক্রিয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হোটেলে রুম ভাড়া নেয়ার পর হোটেলে অবস্থানরত পতিতারা বিভিন্নভাবে উত্তক্ত করে শারীরিকভাবে মেলামেশা করার জন্য। তাদের ডাকে সাড়া দিলে সুকৌশলে জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হয়। সহজে রাজী না হলে পুরুষঙ্গ কেটে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। আর প্রতিটা শারীরিক সম্পর্কের গোপন ভিডিও ধারন করে রাখা হয়। মোটা অংকের টাকা না দিলে পরিবারের কাছে ভিডিও এবং অশ্লীল ছবি পাঠিয়ে দেয়া হবে বলেও ব্ল্যাকমেইল করা হয়।

উক্ত মার্কেটের অনেক ব্যবসায়ী এবং কর্মচারী বিষয়টি জানলেও ভয়ে মুখ খুলতে চান না কেউই। তবে ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে জানান, অবিলম্বে এই অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধ করা উচিত। সমাজের অধপতনে এমন অনৈতিক কাজ পরিহার করার দাবী জানান তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। তবে কে বা কারা এর পেছনে জড়িত তা জানা যায়নি কোনভাবেই। তবে ম্যানেজার জোর দিয়ে বলেন, টাকা দেয়া ছাড়া হোটেল পরিচালনা করা সম্ভব না।

হোটেল ম্যানেজার সোহাগ জানান, প্রতি মাসে একটি মোটা অংকের টাকা দেয়া হয় বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে। বিশেষ করে প্রশাসন এবং মিডিয়া এই টাকার বড় অংশের ভাগ পায় বলে জানান তিনি। তবে কারা প্রতিমাসে এসব টাকা পান তাদের নাম নির্দিষ্ট করে জানানো মালিকের নিষেধ আছে বলে জানান হোটেল ম্যানেজার। অনেক অনুরোধ করার পর তিনি জানান, টেলিভিশন সাংবাদিকদের মধ্যে যারা আসেন তাদের মাসিক সম্মানী তিন হাজার টাকা দেয়া হয়। এছাড়া পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকদের পাঁচশো টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী দেয়া হয়। তবে নির্দিষ্টভাবে কারা এসব টাকা নিতে আসেন তা জানাতে অপারগতা জানান ম্যানেজার সোহাগ।

বাড়তি নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য মেইন রোডসহ বিশেষ বিশেষ স্থানগুলি মনিটরিংয়ের জন্য হোটেল কর্তৃপক্ষের রয়েছে একাধিক সিসি ক্যামেরা। এছাড়া প্রশিক্ষিত দালালেরা ঘোরাফের করে মেইন রোডের ফুটপাত, হোটেলের বিল্ডিংসহ চারপাশে। লোক বুঝে ইশারা ইঙ্গিতে ডাক দেয় তারা। সিঁড়ি এবং লিফটে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে হোটেলটিতে।

এদিকে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, অপরাধী যেই হোক আইনের বাইরে কেউ না। নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে রাজধানীর হোটেলগুলোতে। তথ্যের ভিত্তিতে হোটেলগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে এই প্রতিবেদককে জানানো হয়।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.