নারী পাচার ও দেহ ব্যবসার অভয়ারণ্য পদ্মা আবাসিক হোটেল
লোকচক্ষুর আড়ালে প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারীর পরও নারী পাচার ও দেহ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর সন্নিকটে অবস্থিত টঙ্গীর পদ্মা আবাসিক হোটেল। টঙ্গী বাজারের সবুরা মার্কেটের ৩য় তলায় মো: হাবিবের মালিকানায় পরিচালিত হয়ে আসছে পদ্মা আবাসিক হোটেল। কর্মচারীর সংখ্যা কম হলেও কমিশনে কাজ করে এমন লোকের সংখ্যা নেহাত কম না এই হোটেলে। গ্রাম থেকে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতে আসা সহজ সরল মেয়েদের বিদেশে ভাল বেতনে চাকুরী দেয়ার কথা বলে নানারকম স্বপ্ন দেখায় হোটেল মালিক ও তার সঙ্গীরা। গার্মেন্টসে কর্মরত মেয়েদেরই টার্গেট করা হয় বেশি।
এভাবে একজনের মাধ্যমে আরেকজনকে প্রলুব্ধ করা হয় বিদেশ যাত্রায়। সীমিত টাকায় বিদেশ যাত্রা, ভালো বেতনে চাকুরীসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করা হয় নারীদের। এভাবে দশ/বারো জনের একটি দল তৈরী করে কৌশলে দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয় অসহায় নারীদের। শেষ পর্যন্ত তাদের শেষ ঠিকানা কোথায় হয় তা আর জানার উপায় থাকেনা কারও। এভাবেই সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে নারী পাচারে জড়িত রয়েছে হোটেল মালিক মো: হাবিব।
আবার যাদের পক্ষে বিদেশ যাত্রা সম্ভব না তাদেরকে অল্প সময়ে বেশি উপার্জন এবং দেশে থেকেই বেশি আয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে দেহ ব্যবসায় নাম লেখায় চতুর এই হোটেল মালিক। শুরুতে বুঝতে না পারলেও পরে আর ফেরার উপায় থাকে না অনেকের। তখন বাধ্য হয়েই পতিতাবৃত্তিকে বেছে নেয় অনেকে। একটি মেয়ের জীবনের সুন্দর স্বপ্নগুলো এভাবেই নষ্ট হয়ে যায় হাবিবের মত হোটেল মালিকদের কারনে।
জীবন সুন্দর, যদি উপভোগ্য করা যায়- কিন্তু সমাজের কিছু অসত মানুষের প্রলোভনে পড়ে জীবন, যৌবন, অর্থ, সম্পদ সবই হারাতে হয় একটা সময়। বিপথে কেউই পা বাড়াতে চায় না তবে বাস্তবতা কখনো কখনো নিয়ে যায় একেবারে আস্তাকুড়ে। তখন ফেরার চেয়ে টিকে থাকার লড়াইটাই মূখ্য হয়ে উঠে কারো কারো জীবনে।
পদ্মা আবাসিক হোটেলে কম বয়েসী বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশ লক্ষনীয়। সীমিত সময়ে সীমিত টাকায় যৌন চাহিদা মেটানোর সুযোগ করে দেয়ায় অনেকের কাছেই নিরাপদ আস্তানা পদ্মা আবাসিক হোটেল। গোপন ক্যামেরায় দৃশ্য ধারনের অভিযোগ রয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সমাজের প্রভাবশালীদের সাথে যোগাযোগ থাকায় মুখ খুলতে চায় না ভুক্তভোগীরা।
নিয়মিত মাসিক চাঁদা দিয়ে ম্যানেজ করা হয় সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষদের। সাংবাদিকেরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখে জানিয়ে হোটেলের ম্যানেজার বলেন, প্রতি মাসেই বেশ কয়েকজন সাংবাদিক পাঁচশো থেকে দুই হাজার টাকা সম্মানী নেন। কারা কারা চাঁদা নিতে আসে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে বাধা আছে বলে জানান তিনি।
কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন পদ্মা হোটেলে বেশ কয়েকটি রুম আছে। ঘন্টা, মিনিট কিংবা দিন/রাতের হিসেবে রুম ভাড়া পাওয়া যায় এখানে। কেউ বাইরে থেকে মেয়ে নিয়ে আসে আবার কেউবা হোটেলে থাকা মেয়েদের সাথেই যৌন মিলন করে। এই হোটেলে বিভিন্নজনকে বিভিন্ন সময় আটকে রেখে জোর করে অশ্লীল ছবি তুলে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা অভিযোগে অভিযুক্ত পদ্মা আবাসিক হোটেল।
এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়। সবুরা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, অত্র এলাকার পরিবেশ নষ্টের পেছনে এই হোটেলটি অনেকাংশে দায়ী। অবিলম্বে এসব অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের দাবী জানান তারা।