ডিএসসিসির জন্মসনদ নিচ্ছে না সরকারি প্রতিষ্ঠান
টানা তিন মাস বন্ধ রাখার পর নিজস্ব সার্ভার তৈরি করে গত ৪ অক্টোবর নগরবাসীকে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন সনদ সেবাদান কার্যক্রম শুরু করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ওই সার্ভার তৈরির উদ্দেশ্য ছিল, নগরবাসীর ভোগান্তি লাঘব করা। তবে নতুন সার্ভারের জন্মনিবন্ধন সনদ কোথাও কাজে আসছে না।
কারণ হিসেবে জানা যায়, সরকারের কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারটি যুক্ত করা হয়নি। যার ফলে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানই ডিএসসিসির ইস্যু করা সনদ গ্রহণ করছে না। এ কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন যারা পাসপোর্ট করাতে যাচ্ছেন।
শেওড়া পাড়ার বাসিন্দা মো. রাসেল মিয়া বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন তিনি। এ জন্য পাসপোর্ট করাতে সন্তানের জন্মনিবন্ধন করেন। পাসপোর্টের ফি দেয়াসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার পর ছবি তোলার তারিখ পান। ওই তারিখে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গেলে বলা হয়, ডিএসসিসির জন্মসনদ দিয়ে পাসপোর্ট হবে না। এ ব্যাপারে তাঁকে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন পাসপোর্ট অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবিরের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানান তিনি। শামসুল কবির তাঁকে আশ্বাস দেন, কয়েক দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এরই মধ্যে দিন পনেরো কেটে গেছে। রাসেল মিয়া বারবার পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। বারবারই তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের (আগারগাঁও) পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রেজিস্ট্রার জেনারেলের মূল সার্ভারটি আপডেট করার সময় দু-তিন দিন কাজ করছিল না। তখন দ্রুত সেবা দেয়ার জন্য ডিএসসিসি নিজেরা একটি সার্ভার করে। তারা বলেছিল, শুধু শিশুদের স্কুলে ভর্তি করার ক্ষেত্রে এই সার্ভারে করা জন্মনিবন্ধন দিয়ে কাজ করা যাবে। পাসপোর্ট অফিসে ওই সনদ দিয়ে কাজ হবে না।
তবে যারা পাসপোর্ট করার জন্য টাকা জমা দিয়েছেন, ছয় মাস পর্যন্ত এর মেয়াদ থাকবে। ছয় মাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হলে আবেদনকারীরা জমা দেওয়া ফির বিপরীতে পাসপোর্ট পাবেন।
এদিকে এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারটা যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এই কাজও কিছুটা জটিল। এ জন্য ডিএসসিসির জন্মনিবন্ধন নিয়ে পাসপোর্ট করাতে যারা যাচ্ছেন, তারা সমস্যায় পড়ছেন। তবে তাদের টাকা মার যাবে না। ১৫ জানুয়ারির মধ্যেই সার্ভারটি পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে ইন্টিগ্রেট করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, রেজিস্ট্রার জেনারেলের সাইটে (https://bdris.gov.bd) সারাদেশের মানুষ জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করে আসছে। এই সার্ভারের সঙ্গে দেশে-বিদেশে ১৬টি বড় প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত। কিন্তু ডিএসসিসি হঠাৎ করে নতুন সার্ভার (https://bdris.dscc.gov.bd) দিয়ে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে। এ পর্যন্ত তারা সার্ভারটি শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পেরেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারেনি। ফলে তাদের ইস্যু করা জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে যে ১৯ ধরনের সেবা পাওয়ার কথা, তার ১৮টিই নগরবাসী পাচ্ছেন না।
গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএসসিসি তাদের নিজস্ব সার্ভারে ৩২ হাজার ৫৭৫ জনের জন্মনিবন্ধন করিয়েছে। এর একটি বড় অংশই অভিভাবকরা করিয়েছেন সন্তানের পাসপোর্টের জন্য। এ ছাড়া ব্যাংক হিসাব খোলাসহ নানা কাজের জন্য যারা সনদ নিয়েছেন তারা সেই সেবা পাননি।