স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের উন্নয়নে যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে স্বাস্থ্যখাত তার মধ্যে অন্যতম। তবে বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে সাধারন মানুষের চিকিতসা সেবা প্রাপ্তির বিষয়টি প্রত্যাশার মাইলফলক ছুঁতে পারেনি এখনও। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে প্রয়োজন সরকারী-বেসরকারি পর্যায়ে বেশকিছু গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহন। স্বাস্থ্যখাতের বাস্তবতা ও করনীয় সম্পর্কে সিটিটিভির সাথে কথা বলেছেন রাজধানীর লং লাইফ হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. মো: আবু কাওছার (স্বপন)। সাক্ষাতকার নিয়েছেন নিশাত শাহরিয়ার।
সিটিটিভি: চিকিৎসা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে কতটা ভূমিকা রাখছে বেসরকারি স্বাস্থ্যখাত?
ডা. আবু কাওছার স্বপন: স্বাধীনতার পর থেকে সময়ের সাথে সাথে চিকিৎসাসেবায় বড় অবদান রেখে চলেছে বেসরকারি খাত। চিকিৎসার পাশাপাশি মেডিকেল শিক্ষাতেও বড় ভূমিকা রাখছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে সরকারি মেডিকেল কলেজের চেয়ে সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ।
সরকারি হাসপাতালে শয্যাসংকট, জনবলের অপ্রতুলতার কারণে বেসরকারি হাসপাতালের প্রতি মানুষের উৎসাহ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের এই অগ্রগতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে সাধারন মানুষ। দেশের মানুষের জন্য যে পরিমাণ এবং যে ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দরকার সেটা সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পূরণ করতে পারছে না। সেদিক বিবেচনায় বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত সেই অভাব পূরণ করছে। এতে করে একদিকে যেমন দেশেই সব ধরনের চিকিৎসা পাচ্ছে মানুষ, তেমনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়াটাও অনেকটা কমেছে। এতে করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে দেশ।
সিটিটিভি: সরকারি চিকিৎসা সেবায় বিদ্যমান সমস্যা এবং সমাধানে করনীয় কি?
ডা. আবু কাওছার স্বপন: বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বঙ্গবন্ধু এই খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। শুরু থেকেই স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দেয়ার কারনে এর সুফল ভোগ করছে সাধারন মানুষ। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে অনেকটা অগ্রগতির পরও কিছু প্রতিবন্ধকতার কারনে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না সঠিকভাবে। দেশের উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পদ থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ পদ খালি রয়েছে এখনও।
সরকারী হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ বরাদ্দ নেই বললেই চলে। এছাড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বিষেশায়িত হাসপাতালে রোগীদের ভিড় অনেক বেশি থাকায় রোগীদের মানসম্মত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে রোগীদের একটি বড় অংশ সেবা নিতে পারবে সেখানে। এজন্য উপজেলা, ইউনিয়ন এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের সেবার মানের মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় পদ সৃষ্টি করা হলেও সে অনুযায়ী জনবল নেই।
গ্রামীণ এলাকাসহ প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলগুলোতে চিকিৎসক শূন্যতার হার বেশি। অভাব রয়েছে প্রশিক্ষিত নার্সের। অনেক সরকারি হাসপাতালে সরঞ্জাম পাওয়া গেলেও প্রযুক্তিবিদের পদ খালি রয়েছে অনেক। ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিকস, ল্যাব-টেকনিশিয়ান নিয়োগের ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণ না করা হলে এ অব্যবস্থাপনার সমাধান সহজে সম্ভব না।
শুধু চিকিৎসক নিয়োগ দিলেই হবে না কর্মস্থলে তাদের ধরে রাখাটাও জরুরি। শুধু উচ্চ বেতনই চিকিৎসকদের কর্মস্থলে থাকার ব্যাপারে আকৃষ্ট করতে পারে না, তাদের নিরাপত্তার দিকেও নজর দিতে হবে। বিশেষ করে নারী চিকিৎসকদের আবাসিক ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন। অনেক সময় আধুনিক স্বাস্থ্য সরঞ্জাম থাকলেও সেগুলো চালানোর মতো কাউকে পাওয়া যায় না। ধীরে ধীরে এগুলো পরিচালনার অযোগ্য হয়ে পড়ে এবং রোগীরা অযত্ন অবহেলায় মারা যায়। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয় ব্যবস্থাপনা ও মেরামতে সময় ক্ষেপনের কারনে রোগীদের সেবা ব্যাহত হয়।
এ ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনা করতে হলে যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান ও ইঞ্জিনিয়ার বিকেন্দ্রীকরণ করে দ্রুত সময়ে সব যন্ত্রপাতি মেরামত করতে হবে এবং এ ব্যবস্থাকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। এর জন্য বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হাসপাতালের পরিবেশের উন্নতির জন্য অপরিহার্য। রোগী এবং রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনের কথা বিবেচনা করে টয়লেট ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ ও তদারকির জন্য জনবল নিয়োগে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। হাসপাতালের সেবা সম্পর্কে তথ্য প্রদান এবং তত্ত্বাবধানের জন্য মানবিক জ্ঞানসম্পন্ন জনবল নিয়োগ দিতে হবে।
সিটিটিভি: স্বাস্থ্যসেবায় লং লাইফ হাসপাতালের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাই
ডা. আবু কাওছার স্বপন: সেবা দানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের পাশে থাকার প্রত্যয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে লং লাইফ হাসপাতাল। স্বল্প খরচে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে রোগীদের কাছে আস্থার জায়গা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে রাজধানীর এই হাসপাতালটি। এটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও ব্যবসাকে কখনোই মুখ্য উদ্দেশ্য মনে করে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য অল্প খরচে মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সে লক্ষ্যেই কাজ করছে লং লাইফ হাসপাতাল। অর্থের অভাবে সেবা বঞ্চিত হয়েছে কোন রোগী এমন নজির নেই এ হাসপাতালে।
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে সব ধরনের রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যেমন রয়েছেন এখানে তেমনি সকল প্রকার পরীক্ষা নিরিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতি বছরই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হয় বিনামূল্যে। সম্প্রতি বিনামূল্যে এক হাজার জনের লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করা হয়েছে। এছাড়াও স্কুল- কলেজগুলোতেও হেলথ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেবার মান অনুযায়ী অনেকটা কম মূল্যে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে সেবা নিতে আসছেন রোগীরা। এক কথায় বলা যায়, রোগী এবং স্বজনদের আস্থার ঠিকানা লং লাইফ হাসপাতাল।
সিটিটিভি: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ডা. আবু কাওছার স্বপন: সিটিটিভি পরিবারকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।