র্যাবের অভিযানে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৫৬ সদস্য গ্রেপ্তার
রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে র্যাব। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে গ্রেপ্তার অনেকেই বয়সে তরুণ। বিচিত্র সব নামে তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের দেশি অস্ত্র জব্দ করা হয়।
র্যাব-২-এর অভিযান চলে মোহাম্মদপুর, আদাবর, নাখালপাড়া ও তেজগাঁওয়ের আশপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত এফডিসি মুন্না, কিং মোশাররফ ও আপন ভাই গ্রুপ। অভিযান চালিয়ে চার গ্যাংয়ের ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে চাপাতি, ছুরি, চাকু, চায়নিজ কুড়াল, অ্যান্টি কাটার ও দেশি ধারালো অস্ত্র জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছে এফডিসি মুন্না গ্রুপের মূল হোতা ইসমাইল হোসেন ওরফে এফডিসি মুন্না, আকাশ, ফরিদ। কিং জামাল গ্রুপের দলনেতা জামাল হোসেন, ইমাম হোসেন, আরিফ ওরফে রাসেল মিয়া। কিং মোশাররফ গ্রুপের নেতা মোশাররফ, ফেরদাউস বেপারী, আরমান শেখ, সানি মিয়া; আপন ভাই গ্রুপের মূল হোতা শাকিব ওরফে বস্তি শাকিব, মো. নাহিদ, মো. লাদেন, হৃদয়, আবু সিদ্দিক, খোকন, নিলয় আহম্মেদ, মো. ইব্রাহিম, বিপ্লব শেখ, রাব্বি হোসাইন, তারেক জিয়া, মো. জামাল, মো. শিমুল, মো. রতন, মো. পলাশ, সাঈদ, শরিফ, মো. রাজন, মানিক, মো. কবির, হাসান মো. সাইদ, রাজা শেখ, ইকরাম ও বিপ্লব।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, শেরেবাংলা নগর, নাখালপাড়া, মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে চালাত তারা। একাকী কোনো পথচারীকে পেলে তারা আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে এবং চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়। কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শেরেবাংলা নগর, নাখালপাড়া এলাকাসহ ঢাকা উদ্যান, আদাবর, মোহাম্মদপুরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়ায়। এ ছাড়া তারা মাদক সেবন ও মাদক কারবারের সঙ্গেও জড়িত। গ্রেপ্তার গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন গাড়িচালক, হেলপার, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরোনো মালপত্র ক্রেতা ও সবজি বিক্রেতা রয়েছে। দৃশ্যমান পেশার আড়ালে ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করত বলে জানা যায়। গ্রেপ্তার অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি-সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। অনেকে একাধিকবার কারাভোগ করে জামিনে বেরিয়ে এসেছেন।
এদিকে, র্যাব-১-এর বিশেষ অভিযানে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকা থেকে গ্যাং গ্রুপের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো– মো. শহিদুল, ফারুক, শামীম, হৃদয়, আলমগীর হোসেন, জাহিদ ও সবুজ। তাদের কাছ থেকে চায়নিজ কুড়াল, রড়, সুইচ গিয়ার চাকু, খুর, সাইকেলের চেইন, চারটি মোবাইল ফোনসেট এবং নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য উচ্চৈঃ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় ও বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়। পথচারীদের উত্ত্যক্ত এবং ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়ে হাতাহাতি-মারামারি করে এই চক্র। এ ছাড়া তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকায় অন্যান্য গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। কোনো ঘটনায় কেউ প্রতিবাদ করলেও ক্ষমতা দেখাতে মারামারি করাসহ অনেক সময় খুন করতেও দ্বিধা করে না। স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত এসব গ্রুপের সদস্যরা।
এছাড়া রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে রিংকু গ্রুপ ও অনিক গ্রুপ-এর দলনেতা রিংকু ওরফে আরএম রিংকু এবং হাসিবুল হাসান অনিকসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪। তাদের কাছ থেকে ধারালো চাপাতি, ছুরি, খুর, হেরোইন ও ইয়াবা পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, মিরপুর এলাকায় বেশ কিছু কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। তার মধ্যে কিশোর গ্যাং রিংকু গ্রুপের ২০-৩০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা মিরপুর-২-এর আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি, মাদক সেবন, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। রিংকুর বিরুদ্ধে মিরপুর ও ফরিদপুর নগরকান্দা থানায় মাদক, চুরি, মারামারি এবং খুনের চেষ্টার ধারায় চারটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া অনিক গ্রুপ পল্লবীর বাউনিয়াবাদসহ আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি, মাদক সেবন, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। এই গ্রুপের দলনেতা অনিকের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় চারটি মামলা রয়েছে। রিংকুর বিশ্বস্ত সহযোগীর মধ্যে আছে– তানভীর মাহমুদ সাজ্জাদ, ছাব্বির হোসেন ও রাজীব হোসেন।