৮ টাকার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ৬০০ টাকার নকল ‘জি-পেথিড্রিন’
সন্তান জন্মের সময় প্রসূতি মায়েদের ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহার করা হয় ‘জি-পেথিড্রিন’ ইনজেকশন। অত্যন্ত সংবেদনশীল এ ওষুধ অপারেশনের সময় বা অপারেশনের পর চিকিৎসকরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করেন। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ ইনজেকশনই দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে নকল করে বাজারজাত করে আসছিল একটি চক্র। আর এসব নকল ওষুধ রাজধানীর অনেক খ্যাতনামা হাসপাতালের নিচের বিভিন্ন ফার্মেসিতে বিক্রি করা হচ্ছে।
সম্প্রতি গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম মতিঝিল, বাড্ডা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে এই তথ্য পেয়েছে। গ্রেফতাররা হলেন– মো. আলমগীর খান, মো. মাসুদ রানা ও মো. আহ্সান হাবীব শাওন। মতিঝিল গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. এরশাদুর রহমানের নেতৃত্ব অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারদের কাছ থেকে ২০০টি জি-পেথিড্রিন ইনজেকশন, ২২০টি জি-পেথিড্রিনের অ্যাম্পুল, ১ হাজার ১০টি জি-ডায়াজিপামের অ্যাম্পুল, ৫২০টি জি-পেথিড্রিনের ফাঁকা বক্স, ২০০টি জি-পেথিড্রিন ইনটেক স্টিকার, ২টি (১২ কেজি) জি-পেথিড্রিন ফয়েল পেপার, ১ হাজার ৫০০টি জি-পেথিড্রিনের ব্যবহারবিধি, ১টি জি-পেথিড্রিনের ফয়েল লাগানোর জন্য লোহার চাপ মেশিন, ৫ কেজি অ্যাসিড, ৫টি কাঠ ও প্লাস্টিক দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি স্ক্রিন প্রিন্ট করার ফ্রেম, ২৫০টি জি-পেথিড্রিন রাখার প্লাস্টিকের ট্রে জব্দ করা হয়েছে।
ডিবি জানায়, প্রচলিত ‘জি-ডায়াজিপাম’ ঘুমের ইনজেকশনকে ঘরোয়াভাবে রূপান্তর করে চেতনানাশক ‘জি-পেথিড্রিন’ ইনজেকশন হিসেবে চালানো হতো। অথচ ‘জি-পেথিড্রিন’ তৈরির জন্য শুধু অনুমোদন রয়েছে গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর মিন্টু রোডে অবস্থিত নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘জি-ডায়াজিপাম’ ঘুমের ইনজেকশনকে চেতনানাশক ‘জি-পেথিড্রিন’ ইনজেকশনে রূপান্তরিত করে এ চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাজারজাত করে আসছিল। আমরা তিন জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এদের মধ্যে মো. আলমগীর খান রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকা থেকে ‘জি-ডায়াজিপাম’ ঘুমের ইনজেকশন প্রতিটি ৮ টাকায় কিনে বাসায় নিয়ে যায়। পরে ইনজেকশন অ্যাম্পুলকে এসিড দিয়ে ভিজিয়ে রেখে গায়ে লেখা তুলে কাঠ ও প্লাস্টিক দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি স্ক্রিন প্রিন্ট করার ফ্রেম দিয়ে ‘জি-পেথিডিন’ ইনজেকশনের নামে নামকরণ করে। পরে এসব অ্যাম্পুল প্লাস্টিকের ট্রেতে ৫টি করে সাজিয়ে হাতে চালানো চাপ মেশিন দিয়ে ‘জি-পেথিড্রিন’ ব্যথানাশক ফয়েল পেপার সংযুক্ত করা হয়। আর বাজারে এসব নকল ‘জি-পেথিডিন’ প্রতিটি ৬০০ টাকায় বাজারজাত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, রাজধানীর অনেক খ্যাতনামা হাসপাতালের নিচের বিভিন্ন ফার্মেসিতে এসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়। আমরা বারিধারা জেনারেল হাসপাতালের নিচের ফার্মাসিস্টের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছি, তাকে আটক করা হয়েছে। একইসঙ্গে তদন্ত করে যাদের নাম পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। হারুন অর রশীদ বলেন, এসব ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে একদিকে মুনাফা, অন্যদিকে রোগীদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছে চক্রটি। মিটফোর্ডে কারা এসব ঘুমের ইনজেকশন বিক্রি করতো এবং কোন কোন স্থানে এসব পেথিড্রিন বিক্রি করা হচ্ছে এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই পেথিড্রিন ইনজেকশন প্রয়োগে কেউ মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েছে কি-না এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।