ঈদের দিন ৪৫টি অস্ত্রোপচার পঙ্গু হাসপাতালে

0

ঢাকা : নানা ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক বা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন অনেকে। ঈদের দিনও তা থেকে রেহাই মিলেনি। এদিনও ব্যস্ত থাকতে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

আগত রোগীদের বেশিরভাগই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। এই একদিনেই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে ৪৫ জনের। ঈদের দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ২৫০ জন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুজিত কুমার বৈদ্য বলেন, “হাসপাতালে আসা রোগীদের মধ্যে ৭৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। এছাড়া অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনের দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫৪টি। এসব রোগীর মধ্যে ৪৫ জনকে জরুরিভাবে অপারেশন করতে হয়েছে।”

তাদেরই একজন আব্দুর রাজ্জাক। হাসপাতালের ভেতরে কথা হয় তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, “ঈদের দিন বিকালবেলা মোটরসাইকেল নিয়ে বাইর হইছিল। রাস্তায় অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা খাইয়া একটা পা ভাইঙ্গা গ্যাছে, শরীরেও অনেক জায়গায় ছিলছে। তারপরও আমার স্বামীটারে আল্লাহ বাঁচায়া রাখছে তাতেই আমি খুশি। ঈদের দিনে যে কষ্টটা হইলো বলার মতো না। দোয়া করি এমন ঈদ যেন আর কারো জীবনে না আসে।”

ঢাকার শের-এ-বাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) ক্যাজুয়ালিটি বিভাগ-১ (পুরুষ) এ ভর্তি রয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক (৪০)। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় আব্দুর রাজ্জাককে ঘিরে উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তাদের স্বজনরা।

তার ভাইরা মো. রাসেল জানান, আব্দুর রাজ্জাকের বাসা খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকায়। ঈদের দিন বিকেল ৫ টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে বাসার কাছেই দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। পরে তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। আপাতত পায়ে একটি শিক ঢুকিয়ে ভাঙা পা সোজা করা রাখা হয়েছে। খুব শিগগিরই আবার অপারেশন করতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আব্দুর রাজ্জাক নির্ধারিত পথেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন উল্লেখ করে তার শালা মো. কামাল বলেন, “কিন্তু ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা উল্টোপথে এসে তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। মোটরসাইকেলের গতি কম থাকায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। রং সাইডে অটোরিকশা চলাচল করায় ঈদের দিনের ফাঁকা সড়কেও এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল।”

ঈদের দিন সকালে একই ওয়ার্ডের আরেকটি বিছানায় ভর্তি হয়েছেন মো. জসিম (২৬)। তিনি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার মোহন সরদারের ছেলে। ব্যবসা করেন গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায়। ব্যস্ততা থাকায় ঈদের ছুটি কাটাতে বুধবার গভীর রাতে বাড়ির পথে রওনা হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাড়ির একদম কাছে গিয়েও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা হয়নি তার।

সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে আসতে হয়েছে তাকে। ঈদের দিন সকালে ছেলের এমন অবস্থা কোনওভাবেই মানতে পারছেন না মা ফাতেমা বেগম। হাসপাতালের বিছানায় ছেলের মাথার পাশে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন তিনি। আর একটু পর পর আহত ছেলের কপালে চুমু দিচ্ছিলেন। জসিমের বিছানার আরেক পাশে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার বড় ভাই সালাউদ্দিন।

সালাউদ্দিন বলেন, “ঈদের সকালে বাসে করে ঢাকা থেকে শরীয়তপুর গিয়ে নামে জসিম। এরপর সিএনজি নিয়ে গোসাইরহাট যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়। ফাঁকা সড়কে সিএনজিটি নিজের লেন ছেড়ে ডানপাশের লেনে গিয়ে সড়কের পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে সব যাত্রীই আহত হয়।”

জসিম সিএনজির সামনে বসে থাকায় তার ক্ষতি হয়েছে বেশি। তিনি বলেন, “জসিমের ডান উরু ভেঙে গেছে, বাম হাতও ভেঙেছে। খবর পেয়ে আমরা তাকে উদ্ধার করে ঈদের দিন সকাল ১১টার দিকে পঙ্গু হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছি।”

জসিমের উল্টো পাশের আরেকটি বিছানায় ভাঙা পা নিয়ে কাতরাচ্ছে ৭ বছরের শিশু রিয়াদ হোসেন। সে শেরপুরের তারাকান্দি এলাকার কবির হোসেনের ছেলে। রিয়াদের মাথার পাশে বসে ছিলেন মা মো. রহিমা।

জানা গেল গাজীপুরের এমসিবাজার এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকেন তারা। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একটি কারখানার শ্রমিক। তিনি বলেন, “গত বুধবার বাসার সামনের রাস্তার পাশে খেলার সময় একটি অটোরিকশার ধক্কায় ডান পা ভেঙে গেছে রিয়াদের। পরে ঈদের দিন সকালে তাকে এই হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছি।:

শুধু আব্দুর রাজ্জাক জসিম আর রিয়াদই নয়, তাদের মতো ৩৮ জন ঈদের দিনে এই ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সব ওয়ার্ড মিলিয়ে ঈদের দিনে সর্বমোট ১৩০ জন রোগী জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.