রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়েছে আওয়ামী লীগ: কাদের
বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়াম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, গেলো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় নাই। আমরা গেলেও যা হয়েছে, না গেলেও তাই হতো। আমরা না গেলেও নির্বাচন হতো, জাতীয় পার্টি হয়তো যেতো। সরকারের এমন প্রস্তুতি ছিলো। নির্বাচন গ্রহনােগ্য না হলেও বর্তমান অবস্থা এমনই হতো। বিএনপি আন্দোলনে পরাস্ত হয়েছে, আমি তাদের দোষ দিচ্ছি না। দেশের স্বার্থে তারা কাজ করছে কিন্তু তারা সফল হয়নি। তাদের দোষটা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা বলছে, আমি একটা বিশাল নেতা, আমি নির্বাচনে না গেলে নাকি দেশের ভবিষ্যতই চেঞ্জ হয়ে যেতো। আমি নিজেকে এত বড় নেতা মনে করিনা। আমি নির্বাচনে যেতাম আর না যেতাম দেশ এভাবেই চলতো। এমন পরিস্থিতিই থাকতো। আমাকে দোষ দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। বিএনপি বলছে, আমি নির্বাচনে না গেলেই নাকি নির্বাচন বানচাল হতো আর তারা ক্ষমতায় আসতে পারতো। এগুলো হচ্ছে নিজেদের দোষ ঢাকার জন্য আমার ঘাড়ে দোষ দেয়া।
তিনি বলেন, সংসদে আমি বলেছি, নির্বাচন ভালো হয়নি। এমন বাস্তবতায় আর কোন দল রাজনীতির মাঠে টিকবে না। আমাদের সরকার স্পেস দিচ্ছে না। আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি, সরকারের সমালোচনা করছি। আমাদের দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। বিএনপিকে তো মাঠে নামতেই দেয়া হচ্ছে না। মাঠে থাকছে শুধু আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা করছে। একদলীয় শাসন মানে একজন সুপ্রীম লিডার থাকবে, তিনি সব কিছুতেই জবাবদিহিতার উর্ধে। তিনি ভোট করলে করতে পারেন, না করলে করবে না। যারা নির্বাচিত হবেন তারা ওনার অনুমতি নিয়ে নির্বাচিত হবেন। নির্বাচিতরা প্রথম আনুগত্য করবেন সুপ্রীম লিডারের আর দ্বিতীয় আনুগত্য থাকবে জনগনের কাছে। আর যদি নির্বাচনে কারচুপি হয়, তাহলে প্রথম ও দ্বিতীয় আনুগত্য থাকবে শুধু সুপ্রীম লিডারের প্রতিই। আমরা গৃহপালিত বিরোধীদল হলে তাদের আপত্তি নেই।
জিএম কাদের বলেন, যে সব দলের শেকড় নেই, সেই সব দল সামনে রাখতে চেষ্টা করছে সরকার। নির্বাচনে ঐসব দলের পরিনতি কী ? কিংস পার্টি গুলোর কী হয়েছে ? ১৪ দলীয় জোটের কী অবস্থা ? আওয়ামী লীগের গৃহপালিত মিত্রদের কী হয়েছে ? জনগণের ওপর ভরসা রেখে রাজনীতি করতে হবে। আমি সংসদেও বলেছি, এভাবে চলতে থাকলে দেশে রাজনৈতিক দলগুলো টিকবে না। এতে দেশে চরমপন্থার অর্বিভাব হতে পারে। তাই রাজনীতি করতে হবে হয় গলায় ফুলের মালা না হয় ফাঁসির রশি, এটা যারা গ্রহণ করতে পারবে তারাই রাজনীতিতে সফল হতে পারবে। আমরস দেশকে চরমপন্থার দিকে নিয়ে যেতে দিতে পারি না। আমরা মনে করি, এটা থেকে উদ্ধার পাওয়া সম্ভব… যদি সরকারের মাঝে শুভ বুদ্ধির উদয় হয়। যদিও আমরা এখন পর্যন্ত তার কোন লক্ষণ দেখছি না। সরকারী দলকে আমরা রাজনৈতিক দল মনে করতে পারছি না। আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়েছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণমুখি কর্মসূচি ও আদর্শ থাকবে যা আওয়ামী লীগের মধ্যে নেই। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কথা বলে আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো বৈষম্যের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হলে আমাদের ছেলেরা চাকরী পাবে না, আমাদের ২য় ও তৃতীয় শ্রেনীর সিটিজেন করা হবে। এর প্রতিবাদেই আমাদের ভাষা আন্দোলনে শহীদরা জীবন দিয়েছিলেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে যখন ৬ দফা আন্দেলন জনপ্রীয় হয়ে উঠলো, জাতরি পিতাকে ক্ষমতা দেয়া হলো না। পরবর্তীকালে আমাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়া হলো, তখন মানুষ বুঝতে পারলো বৈষম্য দূর করতে লাগবে আমাদের নিজেদের দেশ। আমাদের দেশ আমরাই চালাবো, প্রতিনিধি নির্বাচন করবো, আমাদের কাছে জবাবদিহিতা থাকবে। এভাবেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলো। আওয়ামী লীগ এখন প্রজাতন্ত্রের জায়গায় রাজতন্ত্র, কতৃত্ববাদীতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা করছে। জনগনের ভোটের অধিকার নেই। তাই দেশ পরিচালনায় জনগণের কোন ভুমিকা নেই।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, রাজনীতিকরণ চলছে, জনগনকে রাজানীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ নির্বাচন করতে চায় না, নির্বাচনে ভোট দিতে চায় না। বিরাজনীতিকরণ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি। বিদেশী প্রতিবেদনে স্বাধীনতার সকল সূচকে বাংলাদেশ পশ্চাতগামী। অপনি কিসের স্বাধীনতার পক্ষ, কিসে আপনার নীতি-আদর্শ ? দেশে একটি গ্রæপ তৈরী হয়েছে, তা নেতাকে পূজা করেন। এমন ভাবে চলেন যেনো দেশ ও জাতি তাদের কাছে বড় নয়। তারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধ করার জন্য কাজ করে। এভাবেই আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়েছে। রাজনীতিতে টিকতে হলে বিরোধীদলীয় বিরোধীদল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এবারো আওয়ামী লীগ চেয়েছে এমন লোকজন যারা প্রথম আনুগত্য করবে তাদের কাছে আর দ্বিতীয় আনুগত্য করবে আমাদের কাছে। অনেকেই পোষ্টারে ছবি দেয় না, জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করে না, কিন্তু জাতীয় পার্টির প্লাটফর্ম ব্যবহার করে। আমাকে সরিয়ে দিতে না পারলে, ভবিষ্যতে এটা এল্যাও করা হবে না। জাতীয় পার্টি করতে হলে, আনুহত্য থাকতে হবে জাতীয় পার্টির দিকে। আওয়ামী লীগের ছবি দিয়ে, আওয়ামী লীগের নেতাকে মেনে জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচন করবে সেটা আর হতে দেয়া হবে না। অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। যারা গৃহপালিত হতে চান, চলে যান। আমরা গৃহপালিত বিরোধীদল হবো না। যে ক’জন থাকে তাদের নিয়েই আমরা দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবো। আপাষকামী হয়ে, বাড়ি-গাড়ি করে লাভ নেই। আওয়ামী লীগের বি-টিম নয়, জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে।
শনিবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভার প্রথম অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন। এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, নির্বাচনের আগে বর্ধিত সভায় আপনারা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, অবস্থা বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার। নির্বাচনকে সামনে রেখে জনমনে এবং আমাদরে নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। কিছুটা অনিচ্ছাকৃত আর বাকিটা পরিকল্পিত ভাবে অপপ্রচার করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে জাতীয় পার্টিকে ধংস করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এরশাদের পরিবারকে ধংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। রাজনীতি থেকে জাতীয় পার্টি ও এরশাদকে চিরতরে নির্বাসন দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। আপনাদের দেয়া দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চেষ্টা করেছি। সরাকরি দল অওয়ামী লীগের জন্য নির্বাচন ছিলো জীবন-মরণের সংগ্রাম। তারা নির্বাচন করতে না পারলে তাদের অস্তিত্ব সংকট হবে।
তিনি বলেন, বিদেশী কিছু শক্তির কথায় পরিস্কার বোঝা গেছে তিনটি বড় শক্তি নির্বাচনকে সফল করতে চেয়েছে। আরো কয়েকটি দেশ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছিলো। তারা সিরিয়াস ভাবেই সরকারকে সমর্থন দিচ্ছিলো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম বিএনপির আন্দোলন সফল হবে না। বাংলাদেশে গণ আন্দোলনের মুখে কোন সরকারের পতন হয়নি। মানুষের আন্দোলন ও সংগ্রামের মাঝে অন্যএকটি শক্তি সরকার পরিবর্তন করেছে। ২০১৩-১৪ সালে গণ আন্দোলনের মুখে তিন মাস দেশ অচল ছিলো, কিন্তু সরকারের পরিবর্তন হয়নি। ১ কোটি মানুষ রাস্তায় নামলেও সরকার পতন হবে না, নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না। আমরা আশা করেছি আওয়ামী লীগ, বিএনপির সাথে আমাদের দর কষাকষির সুযোগ হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ চায় আমরা যেনো বিএনপির দিকে না যাই আর বিএনপি চায় আমরা যেনো আওয়ামী লীগের দিকে না যাই। দেখেছি, বিএনপি অন্দোলনের নামে ফাঁদে পড়ে যায়। আন্দোলনে সহিংসতার নামে তাদের নেতাদের গ্রেফতার করা হলো এবং সাজা দেয়া হলো। এভাবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা হলো।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, এমন অবস্থায় মাঠে থাকলাম আমরা ও আওয়ামী লীগ। তখন প্রশ্ন এলো, আমরা নির্বাচনে না গেলে অওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। কিন্তু আমওয়ামী লীগ আমাদের সাথে কোন দরকষাকষিতে আসে নাই। স্পষ্ট বোঝা গেঝে গ্রহণযোগ্যতার জন্য তা লালয়িত ছিলো না। তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষে জাতীয় পার্টিকে অনুগত বিরোধীদলের ক্যাটাগরিতে ফেলতে পারছিলো না। আমার ধারণা, আমার প্রতি তাদের অবিশ^স ছিলো। তারা আমাকে দিয়ে অনুগত বিরোধীদল সৃষ্টি করতে পারবে না। কিছু পঁচা, মরা ও আবর্জনা আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদের অনুগত বিরোধীদল করতে চেয়েছে। আমি এতে রাজী হই নাই। অনেকেই প্রচার করেছে, গ্রহণযোগ্যতার জন্য জাতীয় পার্টিকে বিক্রি করা হয়েছে, আসলে গ্রহণযোগ্যতার জন্য তারা কোন দলই কিনতে চায়নি। বিভিন্ন চাপের কারনে সরকার আমাদের সাথে সমঝোতা শুরু করেছে। তারা দরকষাকষিতে কোন সুযোগ-সুবিধা দেয়নি। তখন নেতাদের সাথে আলোচনা করলাম। সবাই বললো, আমাদের দল অন্দোলনে নেই, নির্বচিনে না গেলে ভবিষ্যতে দল টিকিয়ে রাখে যাবে না। আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করেছি। তার অর্থ হচ্ছে, রাজনীতি করবো গলায় মালা নেয়ার জন্য, অথবা রাজনীতি করবো না। এখন রাজনৈতিক চরিত্র পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। এখন রাজনীতি হচ্ছে গলায় মালা নিবেন না হলে ফাঁসির রশির জন্য প্রস্তত থাকবেন। এমন রাজনীতির দিকে দেশ চলে যাচ্ছে। তাই আমরা প্রস্তুত নিচ্ছিলাম নির্বাচনের জন্য। ১৬ ডিসেম্বর ২৬ জনের একটি তালিকা দেয়া হলো, যে তালিকায় আমাদের ১০০ জনের, ৭০ জনের বা ৫০ জনের তালিকা অনুসরণ করা হয়নি। তাদের ইচ্ছেমত ২৬ জনের তালিকা করে বলে দিলো, জাতীয় পার্টি প্রার্থীদের পক্ষে আমরা প্রত্যাহার করলাম। সেখানে জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের আরো অনেক প্রার্থী ছিলেন। আওয়ামী লীগের অনেক শক্তশালী প্রার্থী ছিলেন। পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিলো তারা অওায়ামী লীগের অন্য প্রার্থীদের জেতানোর জন্য চেষ্টা চালিয়েছে। সেই ২৬ জনের তালিকা দিয়ে ঘোষণা করা হলো জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়া হলো। বাস্তবতা হচ্ছে নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে কোন ছাড় দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। আইন শৃংখলা বাহিনী দলীয় নেতা কর্মীদের মত কাজ করবে না। ২৬টি তালিকা দেয়ার পরে আমি বলেছিলাম আমাদের আরো ১০ থেকে ১৫ জন ভালো প্রার্থী আছেন, যারা সুষ্ঠু নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবেন। তাদের নাম অন্তরভুক্ত করতে হবে। ১৬ তারিখ সবাইকে জানিয়ে নিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি নির্বাচনে যাবো না। ১৭ তারিখ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিলাম। তার পরে তার চাপ এলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ। প্রত্যক্ষ চাপের কথা বলবো না, আপনারা বুঝে নিবেন। পরোক্ষ চাপ হলো যদি নির্বাচনে নাও যাই তবে নির্বাচন হবে এবং জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা বা আমার সাথে যারা আছেন তাদের নেতৃত্বে নয়। তাতে আমাদের দল গৃহপালিত বিরোধদিল হিসেবে নির্বাচন করে রাজনৈতিক ভাবে হারিয়ে যাবে। আমরা রাজনৈতিক মঞ্চ হারিয়ে ভবিষতে দেশ ও জাতির জন্য কিছু করতে পারবো না। সেই প্রেক্ষিতে আমরা নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম। তখন আমরা আরো ১০ থেকে ১৫টি আসনে নৌকা মার্কা তুলে দিয়ে সকল আসনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি করেছিলাম।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, তারা শুধু আমার স্ত্রীর আসন দিয়ে বলেছে, বাকিটাও প্রসেস করা হচ্ছে বলে জানায়। তারা দায়িত্ব নিয়ে আমাদের নিশ্চিত করেছিলো নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। তখন প্রশ্ন এলো আমার স্ত্রীর জন্য দল বিক্রি করে দিয়েছি। আমি ৩০ বছর ধরে উত্তরায় বসবাস করছি। সেখান থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি আমাদের ছিলো। ২০১৮ সালে আমি নির্বাচনের প্রচারনা চালিয়েছিলাম। আমার স্ত্রী উত্তরায় সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে সুপরিচিত। ঐ আসনে নির্বাচন ও সংগঠনকে সহায়তা করার জন্য অনেক বন্ধু আছে আমাদের। আমাদের অনক সমর্থক আছে সেখানে। আমার স্ত্রী ২০১০ সাল থেকে সরাসরি জাতীয় পার্টি করছেন। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছিলেন। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর আমার নির্বাচনী এলাকা দেখাশোনা করেছেন। নেতা-কর্মীরা তাকে লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। তাকে জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টি শক্তিশালী করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি সাংস্কৃতিক পার্টিকে শক্তিশালী করেছে। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শে তাকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়েছেন। অথচ ব্যাপকভাবে অপপ্রচার করা হয়েছে। সিলেটের আতিকুর রহমান এর আসনের বিপরীতে আমার স্ত্রীর আসন নেয়া হয়েছে, আসলে আমাকে ছোট করতেই এই অপপ্রচার করা হয়েছিলো। আমাকে ধংস করতে চেষ্টা করা হয়েছে শুধু জাতীয় পার্টিকে ধংস করার উদ্দেশ্যে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, পরবর্তীতে যখন আমরা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তখন নির্বাচনে ভালো করার আপ্রান চেষ্টা করেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের ঘেষণা অনুযায়ী ছাড় দেয়া ২৬টি সিট জনমনে এবং নেতা-কর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। ঐ ২৬ জন ভেবেছিলো তারা এমপি হয়ে গেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের তারা আমলে নেয়নি। আবার যারা ২৬টি আসনের বাইরে ছিলো তাদের মাঝে ছড়ানো হয়েছে দল কয়েকশো কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে পার্টি। তারা বলেছে, আমরা এমপি হতে না পারলে টাকার ভাগ চাই। নির্বাচনে নাই অথচ তারা সকাল থেকে রাত অবধি শুধু ফোন করে বলেছে টাকা দিন, টাকা দিন। অপপ্রচার চালিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে। আপনারা সবাই জানেন নির্বাচন কেমন হয়েছে। নির্বাচন হয়েছে তিন ভাবে এক. সরকারের নির্দেশে দুই একটি আসনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। দুই. অর্থ দিয়ে প্রশাসনকে ব্যাবহার করে যে ভোবে পেরেছে, সেভাবেই জিতেছে। আর তিন. সরকারের চাইদা মতো অনেক প্রার্থীদের বিজয়ী করা হয়েছে। এতে আমাদের অনেক জনপ্রীয় প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেনি। আমার দোষ দেয়া হলো, আমি কাউকে টাকা-পয়সা দেইনি আর আমি ঘুরে ঘুরে প্রার্থীদের পক্ষে ক্যাম্পেইন করিনি প্রাধানমন্ত্রীর মতো। আমাকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে তুলনা করা হয়েছে, আমি সৌভাগ্যবান মনে করছি। রাষ্ট্রের সকল সম্পদ ও ক্ষমতা এককভাবে যার কন্ট্রোলে, তিনি হ বললেই তো সব হয়ে যায়। তার সাথে প্রতিযোগিতা করে আমার প্রচারণা চালানো সম্ভব ? এটা এক ধরনের ক্রিটিসাইজ করা হয়েছে। তারপরও আমি আমার নির্বাচনী এলাকার আশেপাশে আমি আমাদের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছি। আরেকটি অপপ্রচার করা হয়েছিলো, আমি নাকি বিরোধীদলীয় নেতা হবার জন্য নির্বাচনে গিয়েছিলাম। বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন আপনারা জানতেন ? এটা নিয়ে তো গবেষনাই চলেছে, যদিও আইনতভাবে আমাদেরই হবার কথা। আমি ডেপুটি লিডার অবদ্যা অপজিশন হয়েছিলাম, আমাকে ডেপুটি লিডার অব অপজিশন থেকে নামিয়েও দেয়া হয়েছিলো। এটা নিয়েও অপপ্রচার চলেছে। আমি গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা হতে রাজী নই। ভবিষ্যতে কি হবে আমি জানি না। আমরা নাকি আমাদের প্রার্থীদের সাগরে ফেলে দিয়েছি। মনোনয়ন বোর্ডে সিনিয়র নেতারা ছিলেন, তাদের মতামতের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাই মনোনয়র বানিজ্যের কথা আসেনা। আমার নামে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযোগ করা হয়েছে, আমি নাকি মনোনয়ন বানিজ্য করেছি এবং সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। আমি মনোনয়ন দেয়ার সময় সকল প্রার্থীকে জানতে চেয়েছি নির্বাচন কররা মত টাকা আছে ? সবাই বলেছে আছে। অনেকেই আমাদের কাছে টাকা চেয়েছে আবার স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সাথে দরকষাকষি করেছে। আমরা ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দেখেছি ৪০ থেকে ৫০ জন প্রার্থী ফাইট করতে পারে। আমরা বাকিদের মনোনয়ন দিয়েছি… জাতীয় পার্টির পোষ্টার লাগাবে, জাতীয় পার্টির নাম থাকবে নির্বাচনের মাঠে। এবারের নির্বাচনে আমাদের মনোনয়ন নিয়ে অনেকে পোষ্টার লাগাননি, শুধু দরকষাকষি করেছে। অনেকে আমাকে আমাদের বিরুদ্ধে টেলিভিশনে গালাগালি করেছে।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো: মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, প্রশাসনের ভুমিকা ও অর্থের অভাবে আমাদের অনেক জনপ্রিয় নেতা নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছে প্রশাসন। তিনি বলেন, নির্বাচনের পর অনেক সহকর্মী ভুল বুঝে দূরে সরে গেছেন, ভালো থাকলে দুঃখ নেই। কিন্তু যারা প্রার্থী হলেন না, নির্বাচন করলেন না তারা গেলেন কেন? পল্লীবন্ধ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এর প্রতিনিধিত্ব করেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তার নেতৃত্বেই জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ আছে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি বলেছেন, পল্লীবন্ধুর জাতীয় পার্টি গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় পার্টি করতে হলে তাঁর নেতৃত্ব মেনেই করতে হবে। আগামীতে জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আমরা পল্লীবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো।
কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেছেন, নির্বাচন কিভাবে হয়েছে তা আপনারা জানেন। নির্বাচনে আমাদের সব কিছু গোছানো ছিলো। হঠাত করেই আমাদের সকল এজেন্ট ও কর্মীদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তিনি নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে আহবান জানান।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখেন – জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো- চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এমপি, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া,মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল,উপদেষ্টা আশরাফুজ্জামান আশু এমপি,।
বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ মধ্যে বক্তব্য রাখেন আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, আহসান আদেলুর রহমান, আহমেদ শফি রুবেল,এস এম ইয়াসির, মহসিন উল ইসলাম হাবুল, সামসুউদ্দিন রিংন্টু, এয়ার আহমেদ সেলিম, সাব্বির আহমেদ,ডাঃ আব্দুল হাই, সালা উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, শফিকুল ইসলাম মধু, জাহিদ হাসান, আলহাজ্ব আবদুর রাজ্জাক, মোজাম্মেল হক,মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ নাসির উদ্দিন, মোঃ জাফর উল্লাহ, কামরুজ্জামান মন্ডল,নূরুল আমিন ভুট্রা, আমির হোসেন ভূঁইয়া, এডভোকেট খন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু, ওমর ফারুক, আলাউদ্দিন, মোস্তফা জামান লিটন প্রমূখ।
উপস্থিত ছিলেন – কো – চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মেয়র, প্রেসিডিয়াম সদস্য – গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি,এস এম আব্দুল মান্নান,এটি ইউ তাজ রহমান, আবদুর রশীদ সরকার, নাসরিন জাহান রতনা,ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী,নাজমা আক্তার, সৈয়দ দিদার বখত, একেএম সেলিম ওসমান এমপি, মেজর অবঃ রানা মোহাম্মদ সোহেল, এমরান হোসেন মিয়া, শেরিফা কাদের, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান এমপি,শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এমপি, মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সহ উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ।