রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। ৩ নং ওয়ার্ডটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে বিভিন্ন কারণেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই ওয়ার্ডের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক মিরপুর মডেল থানার অন্তর্গত ৩ নং ওয়ার্ডটি মিরপুর সেকশন- ১০, মিরপুর সেকশন- ১১, ব্লক- সি এলাকা নিয়ে গঠিত। এর আয়তন ১.০১ বর্গকিলোমিটার। প্রায় দুই লক্ষ লোকের বসবাস এই ওয়ার্ডে। ঢাকা-১৬ আসন থেকে নির্বাচিত মো: ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা এই ওয়ার্ডের সংসদ সদস্য। ওয়ার্ডটিকে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক। জনগনের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি নিয়ে কথা হয় এই জনপ্রতিনিধির সাথে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন দৈনিক চৌকস পত্রিকার চিফ রিপোর্টার নিশাত শাহরিয়ার।
একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকার উন্নয়নে আপনার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাই
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই অত্র এলাকার উন্নয়নসহ এলাকাবাসীর বিপদে আপদে পাশে আছি। এই ওয়ার্ডের ব্যবহার অযোগ্য অর্ধশতাধিক সড়ক সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। মিরপুর ১১ নম্বরের প্যারিস রোড, মিরপুর ১০ নম্বরের ঝুটপট্টি মোড়সহ বিভিন্ন সড়কের আমূল সংস্কার করা হয়েছে। ৩ নং ওয়ার্ডকে একটি মডেল হিসেবে পরিচিত করে তোলার চেষ্টা করছি। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার, রাস্তা ঝাড়ু দেয়া, শতভাগ সড়ক বাতি এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। বিভিন্ন ওয়ার্ডের বর্জ্যের আউটলেট হিসেবে পরিচিত এই ওয়ার্ড। ২, ৪, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সবটুকু এবং ৬, ৭, ১৩, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক আউটলেট ড্রেনটি এই ওয়ার্ডে অবস্থিত। তাই সব ওয়ার্ডের সকল বৃষ্টির পানি, বর্জ্যসহ ময়লা পানি বাউনিয়ার ৬০ ফুট খালে গিয়ে পড়ে। এই ৬০ ফিট খালটি সরকারি খাল। ১০ নম্বর সেকশনের ডি ব্লক থেকে ১৩ নম্বরের বাইশটেকি হয়ে বাউনিয়া ৬০ ফুট খাল পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ড্রেন নির্মাণ করতে অনেক মানুষের বিরাগভাজন হতে হয়েছে। কেননা জনস্বার্থে ড্রেনটি অনেকের জায়গার উপর দিয়ে নিতে হয়েছে। এটি অনেকটা ছোটখাটো একটা নদীর মতো ছিল। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে এলাকার বিভিন্ন স্থানে ডাস্টবিনের ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া মশার উপদ্রব কমাতে মশার ঔষধ দেয়া হয় অত্র ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে।
মাদক নির্মূলে কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন ?
মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরন করে কাজ করছি। এক সময় এই ওয়ার্ডটি মাদকের স্বর্গরাজ্য ছিল। এখন এলাকায় মাদকসেবী অনেক কমে গেছে। মাদককে নিরুৎসাহিত করা এবং প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। মাদক প্রতিরোধের জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়মিত কাজ করছে। যেখানেই মাদকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বাসযোগ্য ঢাকা সিটি গড়ে তুলতে সবুজায়নের গুরুত্ব কতখানি ?
নগরের সবুজায়নে পিছিয়ে নেই ঢাকা উত্তর সিটির ৩ নং ওয়ার্ড। মেয়র মহোদয়কে নিয়ে ক্যাম্পিং করে ১৭টি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে ২০ হাজার গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। বৃক্ষ রোপণের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা নিয়ে মসজিদের ইমামগণ নিয়মিত সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখছেন। এছাড়াও মেয়রের মাধ্যমে ১২ হাজারের বেশি গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডের অনেক বাড়িতে ছাদ বাগান রয়েছে।
রাজনীতিতে জড়ালেন কিভাবে ?
বাবা ছিলেন বৃহত্তর মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট। বাবা রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের আসা যাওয়া ছিল। ড. কামাল হোসেন, জেনারেল ওসমানী, ডঃ মোশারফ হোসেনসহ অনেক নামকরা রাজনীতিবিদ আমাদের বাসায় আসেন। তাদের মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে জীবন গড়ার প্রতি আগ্রহের জন্ম হয়। আর সেটাই ছিল রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশের আত্মপ্রকাশ। শুরুটা ছিল ছাত্র রাজনীতি দিয়েই। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতি । ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯৪ সালে যুবলীগে যোগদান। পল্লবী থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন ২০০৩ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছি।
রাজনৈতিক জীবনে হয়রানির শিকার হয়েছেন কি ?
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় দুইবার জেল খেটেছি। বিএনপি বিরোধী আন্দোলনে বেশ কয়েকটি মামলায় একাধিকবার কারাবরণ করেছি। ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত হয়রানীমূলক মামলা হয়েছে ৩৭টি এবং ১৮ বার জেলে যেতে হয়েছে। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনেক কষ্ট, নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।
জীবনের গল্প
জন্ম ১৯৭৩ সালের ২৩ জুলাই। মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ১৪ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাসায়। আদি বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ। বাবা কাজী মুসলিম উদ্দিন আহমেদ আমেরিকান অ্যাম্বাসির ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিয়ার ছিলেন। মা নাজমা বেগম গৃহিণী। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে চতুর্থ। মিরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৮৭ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৮৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। শৈশব কেটেছে মিরপুর ১০ নম্বরেই। ২০০৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। স্ত্রী পেশায় গৃহিণী। স্বপরিবারে মিরপুর ১০ নম্বরেই বসবাস।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।