বাবার বিদায়ে ছেলের আগমন, নৌকার নমিনেশন পেলেন যারা
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা নৌকা প্রতীকে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন আবার অনেকের নানারকম অসুখ বিসুখসহ বয়স হয়ে গেছে। এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এমন কয়েকজন নেতার সন্তানদের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছে ক্ষমতাশীল দল আওয়ামী লীগ। নতুন করে এমন ১১ জন নৌকার মাঝি হিসেবে নমিনেশন পেয়েছেন তাদের বাবার আসনে।
১. আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বর্তমান সংসদে চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত দলীয় মনোনয়ন বোর্ডেও আছেন তিনি। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন তিনি। ৮০ বছর বয়সী এই নেতা এবার বয়সের কারণে সরাসরি ভোটে অংশ নিচ্ছেন না। তবে তার আসনে ছেলে মাহাবুব উর রহমান পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।
২. আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা এইচএন আশিকুর রহমান ১৯৮৬ সাল থেকে রংপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে আসছেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কাছে হেরে গেলেও উপনির্বাচনে জয়ী হন তিনি। এরপর ২০০১ সালেও হেরে যান তিনি। তবে গত তিনটি নির্বাচনে পরপর জয়ী হয়ে সংসদে আছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। বয়সের কারণে এবার ভোটে অংশ না নেয়ায় তার ছেলে রাশেক রহমান রংপুর-৫ আসনে দলের নির্বাচনী টিকেট পেয়েছেন। রাশেক রহমান আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবেও আছেন তিনি।
৩. ঠাকুরগাঁও-২ আসনে পরপর সাতবারের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম। তিনি শুরুতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) করতেন। ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে সিপিবি থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।এরপর আওয়ামী লীগে যোগদান করে নৌকা প্রতীকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এবারও মনোনয়ন চাওয়ায় বয়স বিবেচনায় নিয়ে তার ছেলে মো.মাজহারল ইসলামকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হয়। পেশায় শিক্ষক মাজহারুল বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
৪. ঢাকা-৭ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম একটা সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়ায় যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। দুর্নীতির মামলায় তার সাজা হওয়ায় সংসদ সদস্য পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠায় নিজের ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছেন তার নির্বাচনী এলাকা। এবার পুরান ঢাকার আসনটিতে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন হাজি সেলিমের বড় ছেলে সুলাইমান সেলিম।
৫. আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা রহমত আলীর মেয়ে রুমানা আলী গাজীপুর-৩ আসন থেকে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। ১৯৯১ থেকে শুরু করে টানা আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রহমত আলী। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি স্থানীয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ৭৫ বছর বয়সে ২০২০ সালে মারা যান তিনি।
৬. পাবনা-৪ আসনে ১৯৯৬ সাল থেকে পরপর পাঁচ বার নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হয়েছেন শামসুর রহমান শরীফ। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ৮০ বছর বয়সে ২০২০ সালে মারা যাওয়ার পর এবার তার ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ পেয়েছেন নৌকা প্রতীক। তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
৭. ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হন বরিশালের অাওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ। ১৯৭৩ ও ১৯৯১ সালের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন এই নেতা। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে হেরে যাওয়ার পর ২০০২ সালে মারা যান তিনি। তার মেয়ে শাম্মী আহমেদ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন শাম্মী আহমেদ।
৮. হবিগঞ্জ-২ আসনে নতুন মুখ ময়েজ উদ্দিন শরীফ। তার বাবা প্রয়াত মো. শরিফ উদ্দিন ছিলেন সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হন শরিফ উদ্দিন। ’৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মাত্র দুই মাস পর আগস্টে মারা যান তিনি এবার তার ছেলে ময়েজ উদ্দিন পেয়েছেন নৌকা প্রতীক। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আইন সম্পাদক ছিলেন ময়েজ উদ্দীন। পেশায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তিনি।
৯. ময়মনসিংহ সদর আসনে প্রথমবারের মতো নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন মোহিত উর রহমান (শান্ত)। মোহিতের বাবা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ১৯৮৬ ও ২০০৮ সালে ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ৮১ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর এবার তার ছেলে মোহিত মনোনয়ন পেয়েছেন।
১০. সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-৪ আসনে (সীতাকুণ্ড-নগরের একাংশ) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন । এবার এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল কাশেমের ছেলে এসএম আল মামুন। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি।
১১. জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বাদ পড়েছেন এবার। অডিও ফাঁসসহ নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন মুরাদ হাসান। এবার তার বদলে ওই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় মৎস্য ও প্রাণিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান। এবারই প্রথম তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক দুবার এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে নৌকা নিয়ে জয়ী হন তিনি। ৮৫ বছর বয়সে ২০১৬ সালে মারা যান এই নেতা। ৪০ বছর সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি।